May 19, 2024, 6:11 am

চুনারুঘাটে গৃহকর্তা আতর আলী ও তানজুর আঘাতে দিনমজুর আঃ হক অবশেষে চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় মৃত্যু \ অভিযোগ দেয়ার দেড় মাস পর থানা কর্তৃপক্ষ নিল মামলা

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি \ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামে গৃহকর্তা আতর আলী ও তার ছেলে তানজুরের আঘাতে দিনমজুর আঃ হক (৫০) অবশেষে চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল রবিবার রাত সাড়ে ১২টায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসাও নিতে পারেননি এই অসহায় বৃদ্ধ লোকটি। আঃ হকের আঘাতস্থলে ইনফেকশন হয়ে বাম চোখটি পচে গলে নষ্ট আর কষ্টের তীব্রতায় গত ৬ মাস ধরে কাতরাচ্ছিলেন তিনি। চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিনমজুর আঃ হক মরণব্যাধি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হয়ে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে নিজ বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় কষ্টের তীব্রতায় গতকাল রবিবার গভীর রাতে মৃত্যুবরণ করেন। কেউ এগিয়ে আসছিলেন না এই দিনমজুর অসহায় লোকটির পাশে। অভিযোগ ও আঃ হকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হক দীর্ঘ ০৮ বছর পেটের তাগিদে সুন্দরপুর গ্রামের গৃহকর্তা আতর আলীর ঘরে ৪ হাজার টাকা মাসিক বেতনে গৃহবিত্তের কাজ করে আসছিলেন। স্ত্রী সন্তানহীন দিনমজুর আঃ হক নিজের উপার্জিত সম্পূর্ণ টাকা গৃহকর্তা আতর আলীর নিকট জমা রাখতেন। গত বছরের ২০ নভেম্বর আঃ হক তার গৃহকর্তা আতর আলীর ঘরে আর কাজ করবে না বলে তার পাওনা টাকাগুলো ফেরত চাইলে গৃহকর্তা আতর আলী ও তার ছেলে তানজুর এ সময় আব্দুল হককে এলোপাথারি মারধর করে এবং ধান কাটার জং ধরা কাস্তে দিয়ে আঃ হকের বাম চোখের নিচে গালে আঘাত করে। পরে গৃহকর্তার স্থানীয় চিকিৎসা ও উন্নত চিকিৎসায় গাফিলাতির কারণে আহত আঃ হক দিন দিন ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এসব বিষয় গোপন রেখে রোগীর পরিবারকে না জানিয়ে গৃহকর্তারা চুনারুঘাট হাসপাতালে জনৈক ডাক্তারকে দিয়ে ফোড়া বলে আঃ হকের গালে কাটাছেড়া করে রোগীকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে তার বোন হাসপাতালে গিয়ে তার এ করুন অবস্থা দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান এবং এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে সাটিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে, রিপন, মেম্বার মিজান, ফারুক, কালা মিয়া, সুরুজ মিয়া, হামিদ মিয়া, রফিক, আঃ হামিদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৯নং রানীগাঁও ইউপি অফিসে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সালিশ বৈঠকে আঃ হকের চিকিৎসা সংক্রান্তে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব, রায় সিদ্ধান্ত দেন চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ। তখন বিবাদী গৃহকর্তা আতর আলীরা সালিশ বৈঠক মেনে চলে যান। পরবর্তীতে মিজান মেম্বারসহ ২/১ জন মুরুব্বী বিষয়টি ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাদীনি সহ জখমী আঃ হক ও তার পরিবারের সকল সদস্যদের আপোষনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। ৬ এপ্রিল আঃ হককে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল থেকে ছাড়পত্র প্রদান করলে, শয্যাশায়ী অবস্থায় আঃ হককে এ্যাম্বুলেন্স যোগে চুনারুঘাট থানায় তাহার জবানবন্দী দেওয়ার জন্য বাদীনি থানায় নিয়ে অফিসার ইনচার্জকে না পেয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আশিকুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন এবং বিষয়টি জানান। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেওয়ার ১ মাস ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তাহেরা খাতুন সুবিচারের আশায় গত ১৩ এপ্রিল হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং এর অনুলিপি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেন। থানা পুলিশ প্রশাসন সহ মানুষের দ্বারে দ্বারে বিচারের বাণী নিয়ে আইনী সহযোগিতা আর ভাইকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ঘুরেছেন আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন দিনমজুর আঃ হকের বোন বৃদ্ধা অসহায় ও বিধবা বাদীনি তাহেরা খাতুন। ওই সহজ সরল অসহায় দিনমজুর আঃ হককে দেখে চোখের পানি ফেলেছেন এলাকার অনেক সাধারণ লোকজন। এ ঘটনায় সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থা চলছে। গৃহকর্তা আতর আলী ও তার ছেলে তানজুরের আঘাতে দিনমজুর আঃ হক দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ও অবশেষে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অববস্থায় মৃত্যুবরণ করায় থানা পুলিশ প্রশাসনের প্রতি গৃহকর্তা আতর আলী ও তানজুরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান বাদী তাহেরা খাতুন ও তার পরিবার সহ এলাকার সচেতন মহল।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা